ভূতের প্রকারভেদ(ভূত +তান্ত্রিক জ্ঞান)
ভূতের প্রকারভেদ(ভূত +তান্ত্রিক জ্ঞান)
ভুতের কথা শুনলে ছোট বড় সকলেরই গা ছমছম করে। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে পৃথিবীর সকল দেশেই ভুত বিশ্বাসী মানুষ আছে। আজ আপনাদের সামনে কিছু ভুতের উপমা তুলে ধরলাম।
১। মোহিনী: এটা একটা পেত্নী। এরা সাধারাণত সে সব মেয়েদের আত্মা যারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা বিয়ের আগেই আত্মহত্যা করেছে। এরা সুন্দর সুন্দর ছেলেদের মোহিত করে নিয়ে যায় এবং তাদের আর খুজে পাওয়া যায় না। এরা খুব প্রতিশোধ পরায়ন!
২। শাকচুন্নী: শাকচুন্নি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ শাকচুরনী থেকে এসেছে। সাধারাণত সে সব বিবাহিত মেয়েদের আত্মা যারা তার বা স্বামীর পরকীয়ার জন্য জীবন দিয়েছে। এরা হয় খুব পুরুষ লোভী হয় অথবা খুব পুরুষ বিদ্বেষী হয় । শাকচুন্নিরা সাদা পোশাক পড়েও এবং তাদের হাতে শঙ্খ বা শাঁখা থাকে। শাকচুন্নিরা সাধারণত ধনী বিবাহিত মহিলাদের উপর ভর করে বা আক্রমণ করে, যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে। লোকবিশ্বাস মতে, শাকচুন্নিরা আম গাছে বসবাস করে।
৩। শাকিনী: এরা সাধারাণত সেই সব মেয়েদের আত্মা, যারা বিয়ের পরে অসুখে বা নির্যাতনে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা মোহিনীদের মত অত মারাত্মক না হলেও নির্যাতনকারী স্বামী বা শ্বশুর বাড়ীর লোকদের ওপর আক্রোশ থেকে আক্রমণ করে।
৪। ডাকিনী: এরা সাধারাণত সেই সব মেয়েদের আত্মা যারা অসময়ে কোনো কারণে মারা গেছে। মোহিনী, শাকিনী বা শাকচুন্নী সবাই ডাকিনীর অন্তর্ভুক্ত।
৫। চোরাচুন্নী: এরা সাধারাণত সে সব মেয়েদের আত্মা যারা জীবনে চোর ছিলো। পুরুষ চোরের হলো চোরাচুন্না বা চোরাভুত। এরা মরার পরও চুরি ছাড়তে পারে না। চোরাচুন্নি অত্যন্ত দুষ্ট ভূত। এরা মানুষের অনিষ্ট করে থাকে। সাধারণত কোন চোর মৃত্যুবরণ করলে চোরাচুন্নিতে পরিণত হয়। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে গঙ্গাজলের (বাংলা সংস্কৃতিতে গঙ্গা জলকে পবিত্র জল হিসেবে বিবেচনা করা হয়) ব্যবস্থা করা হয়।
৬। ডাইনী: এরা অত্যন্ত সুন্দরী মেয়েদের আত্মা। এদের ডাইনী বুড়ি বলা হলেও এরা কোনোদিন তাদের রুপ যৌবন হারায় না। আবার অন্য একটি ধারনা মতে, ডাইনী মূলত কোন আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে এবং ইউরোপীয় লোকসাহিত্যেও সাধারণত কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যায় পারদর্শী নারীদের ডাইনি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকে। ইউরোপে মধ্যযুগে এই ডাইনীদের নির্মমভাবে মেরে ফেলা হতো।
৭। ব্রহ্ম দৈত্য: এরা বাংলা অঞ্চলে ভূতদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এরা সাধারণত ব্রাক্ষণদের ভুত। এরা খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সাধারণত কারো ক্ষতি করে না। কিন্তু উল্টাপাল্টা হলেই মারাত্মক অভিশাপ দিয়ে বসে। এরা ধূতি ও পৈতা পরিহিত অবস্থায় বিচরণ করে। এদেরকে পবিত্র ভূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা অত্যন্ত দয়ালু ও মানুষের অনেক উপকার করে থাকে। দুই বাংলার বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে যেসব ভূত চিত্রায়িত হয় তার বেশিরভাগই ব্রহ্ম দৈত্য।
৮। মামদো ভুত: সনাতন শাস্ত্র মতে এরা সাধারণত বিধর্মী পুরুষ ভুত! মুসলমান ভূতেরাই হচ্ছে ‘মামদো ভূত’।
৯। পেঁচাপেঁচি: এই ধরনের ভূত পেঁচার মতো রূপ নিয়ে বনে জংগলে বাস করে এবং মানুষ দেখলে খেয়ে ফেলে। পেঁচাপেঁচি ভূত ধারনাটি পেঁচা থেকে এসছে। এর স্ত্রী বাচক হলো পেঁচি। এরা জোড়ায় জোড়ায় শিকার করে থাকে। বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এরা সাধারণত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয়। সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে এবং শিকারের দেহ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।
১০। নিশী: নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিশি ভূত হতে পারে। এরা নিশিকালে বা রাতে মানুষকে সম্মোহিত করে নিঃশব্দে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায় এবং মেরে ফেলে। ধারনা করা হয়, আক্রান্ত মানুষরা নিজেরাও নিশিতে পরিণত হয়। লোকবিশ্বাস হচ্ছে, তান্ত্রিকরা এদের লালন পালন করে এবং অন্য মানুষকে বশ করার বা ক্ষতি করার কাজে লাগায়। লোকবিশ্বাস অনুসারে নিশিরা কোন মানুষকে দুবারের বেশি ডাকতে পারে না। রাতের বেলা কেউ তিনবার ডাকলে তারপর বের হলে নিশির আক্রমণের ভয় থাকে না।
১১। স্কন্ধকাটা: বিভিন্ন দূর্ঘটনায় মাথা হারিয়ে মারা যাওয়া মানুষদের ভূত হচ্ছে স্কন্ধকাটা ভূত। এইসব ভূতের মাথা থাকে না। লোকবিশ্বাস হচ্ছে, এ ধরনের ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায়। এরা অন্য মানুষকে আক্রমণ করে তাদের দাসে পরিণত করে এবং তার মাথা খোঁজার কাজে নিয়োগ করে।
১২। দৈত্য: শারীরিক ভাবে ভীষণ শক্তিশালী পুরুষ মানুষের আত্মারা হচ্ছে দৈত্য। এরা অদৃশ্য থাকে না এবং এদের হাতে গদা বা মুগুর থাকে!
১৩। আলেয়া: এসমস্ত ভুত/পেত্নী জলাশয়ে বসবাস করে এবং মাঝি বা জেলেদের ভয় দেখায়। এরা সাধারণত ধোঁয়ার আকারে থাকে! অনেক সময় এরা মানুষের উপকারও করে থাকে!
১৪। কানাঘুরা বা কানাহুলা: গ্রাম শহর সব জায়গায় এরা থাকে। এদের পাল্লায় পড়লে মানুষ রাস্তা ভুলে যায়। একই জায়গায় অনেকক্ষণ চরকির মত ঘুরতে থাকে পথ ভুলে। এরা মানুষকে পথ ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে।
১৫। মেছোভুত: নৌকাডুবি বা অন্যভাবে মাছ ধরাকালীন সময় যেসব জেলে অপঘাতে মারা যায় তাদের আত্মা মেছোভূত হয়। মাছের ওপর খুব লোভ। অন্য একটি ধারনায় বলা হয়েছে, এটি একটি ভূত যে/যারা মাছ খেতে পছন্দ করে। ‘মেছো’ শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারনত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে বা লেকের ধারে যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।
১৬। পিশাচ: পিশাচ একধরনের রূপকথার দানব যে মানুষের মৃতদেহ ভক্ষণ করে, সাধারণত অ-মৃত হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। পিশাচতত্ত্ব নিয়ে প্রায় সব ধর্মের নিজস্ব মতামত রয়েছে। এরা কবরের মধ্যে বাস করে বলে মনে করা হয়। যেকোনো প্রাণীর রূপ নিতো পারে এরা। সবচেয়ে নৃশংস অশরীরী পিশাচ।
১৭। পেত্নী: অতৃপ্ত, অবিবাহিত মৃত নারীদের আত্মা হলো পেত্নী। ‘পেত্নী’ শব্দটি সংস্কৃত ‘প্রেত্নী’ শব্দ থেকে এসেছে (পুরুষবাচক শব্দ প্রেত)। এসব ভূত সাধারণত যে কোন আকৃতি ধারন করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এরা সাধারণত বেঁচে থাকতে কোন অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং মৃত্যুর পর অভিশপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারণত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং কাউকে আক্রোমণের পূর্ব পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। লোকবিশ্বাস হচ্ছে, পেত্নীদের পাগুলো পিছনের দিকে ঘোরানো তাকে।
১৮। দেও: নদী বা হ্রদে বসবাসকারী ভূত। এরা লোকজনকে পানিতে ফেলে ডুবিয়ে মারে বলে বিশ্বাস করা হয়।
১৯। গেছোভূত: গাছে বসবাসকারী ভূত। ‘গেছো’ শব্দটি ‘গাছ’ (বৃক্ষ) শব্দ থেকে এসেছে।
২০। বেঘোভূত: এরা হলো সেইসব মানুষের আত্মা যারা বাঘের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারণত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত। এসব ভুত জঙ্গলে মধু আহোরনে আগত গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের নিকট নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে কেঁদে উঠে।
২১। বামন ভূত: বামন ভূত খনি শ্রমিকদের অতৃপ্ত আত্মা। খনি থেকে পাওয়া ধন সম্পদ ভোগ করতে না পেরে মৃত্যুর পর তারা ভূত হয়ে যায়। এদের কথা পশ্চিম ছাড়া প্রায় শোনাই যায় না। এরা ছোট লম্বায় দুই ফুট, একসাথে দুইজন করে ভয় দ্যাখাতে আসে, পরপর দুইদিন এদের দেখা যায়। বামন ভূতের চোখ টকটকে লাল, কান চোখা চোখা, দাঁত সোনায় বাঁধানো থাকে। এরা সাজগোজ করতে পছন্দ করে। বামন ভূত পুরানো আমলের আলখাল্লা পরে আসে, এদের এক কানে দুল থাকে। এরা সোনার বেল্টও পরে।montroguro..01978142102
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন